‘একদিন শাহজাহান তার রাজস্বের হিসাবপত্রগুলি নজর দিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলেন। তার চোখ পড়ল একটি গ্রামের রাজস্বের ওপর, দেখলেন এই বছরের রাজস্ব আগের বছরের রাজস্বের তুলনায় কয়েক হাজার (দাম?) বেশি। সঙ্গে সঙ্গে তিনি প্রধান দেওয়ান সাদাউল্লা খাঁকে তার সামনে উপস্থিত হতে নির্দেশ দিয়ে এই ঘটনার বিবৃতি দাবি করলেন। সাদাউল্লা খাঁ তখন খাজাঞ্চিখানায় বসে কিছু হিসেবপত্রে চোখ বুলোচ্ছিলেন এবং তার জটিল দপ্তরের নানান হিসেব নিকেশে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি যে অবস্থায় ছিলেন(যে পোষাক পরেও) সেই অবস্থায় বার্তাবহনকারী তাকে সম্রাটের সম্মুখে নিয়ে এলে সম্রাট তাকে প্রশ্ন করলেন, এই গ্রামের রাজস্ব বৃদ্ধির কারণ কি? স্থানীয় তদন্তে দেখা গেল, গ্রামের পাশের বহতা নদী কিছুটা সরে গিয়ে একটি চর গজিয়ে উঠেছে, তার ফলে সেই গ্রামের উৎপাদন বেড়েছে। সম্রাট প্রশ্ন করলেন জমিটার চরিত্র কি, খালসা না আইমা – আবারও তদন্ত হল, দেখা গেল এই জমিটি আইমা (শুল্কহীন) চরিত্রের। তখন সম্রাট শাহজাহান বিপুল ক্রোধে চিৎকার করে উঠলেন, ‘ঐ জমিটার ওপরের জল সরে গিয়েছে কেননা বিধবা, অনাথ এবং গরীবদের ওপর অত্যাচারের কান্নায়, এটা তাদের প্রতি সর্বময়ের আশীর্বাদ স্বরূপ এবং রাষ্ট্র কি করে এই জমিটির রাজস্ব আদায় করে! যদি ভগবানের আশীর্বাদ এই মানুষের ওপর না পড়ত তা হলে আমি ঐ দ্বিতীয় শয়তান, অত্যাচারী ফৌজদারকে(যার আদেশে এই নতুন জমি থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে) এক্ষুনি হত্যা করার আদেশ দিতাম। তাকে এই মুহূর্তে বরখাস্ত করে অন্যদের এই ধরণের কাজ না করতে বার্তা পাঠাও। আর যে অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে, তা সেই গ্রামে ফেরত দিয়ে এস।’’
এই যে সেই গল্পটি এখানে বর্ণনা করলাম আমরা মনে করি খুব ব্যতিক্রম নয়। মুঘল আমলের রাষ্ট্র প্রধানদের নীতি ছিল কোন কৃষকের ওপরে অনাবশ্যক আঘাত না করার। এবং এটি শুধু সাধারণ উচ্চশ্রেণীর ইচ্ছে ছিল তাই নয়, এটি তারা বাস্তবে প্রমান করেছিলেন। শাহজাহান আর আওরঙ্গজেবের আমলের ইতিহাসে এধরণের নানান ঘটনা ছড়িয়ে রয়েছে। অবৈধ শুল্ক আদায়ের কোন ঘটনা যদি সম্রাটের কানে পৌঁছত, তাহলে তিনি তাদের বিরুদ্ধে চরম শাস্তি প্রদান করেছেন, এমন কি দেওয়ানকেও বরখাস্ত করেছেন। এ বিষয়ক একটি ঘটনা ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরির ৩৭০ নং পারসিক পাণ্ডুলিপির ৬৮ নম্বর পাতাটি দ্রষ্টব্য। এই ঘটনা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখায় শাহজাহান তার সাম্রাজ্যের কৃষকদের মুক্তি দিতে কি করে ছিলেন।
যদুনাথ সরকার, দ্য মুঘল এডমিনিস্ট্রেশন
সূত্র: বিশ্বেন্দু নন্দ/সুতপা দেব/ফেসবুক
----
ভবিষ্যতে বিষদে চর্চার জন্য উপরোক্ত লেখাটি সংগহ করে রাখা হল।
***
No comments:
Post a Comment